নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামের তিন বছর বয়সি নুসরাত জাহান রোজাকে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন তার সৎ মা জোবাইদা বেগম (১৯)। জোবাইদা বেগম লোহাগড়া থানার গিলাতলা গ্রামের সজীব কাজীর ২য় স্ত্রী। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে নড়াইল জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার লোহাগড়া থানার গিলাতলা গ্রামে তিন বছরের শিশু নুসরাত জাহান রোজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নুসরাত জাহান রোজার সৎ মা জোবাইদা বেগমকে লোহাগড়া থানায় নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে নুসরাতের সৎ মা জোবাইদা বেগম নিজের দোষ স্বীকার করেন। এই ঘটনায় শিশু নুসরাতের দাদা আবুল খায়ের কাজী (৫০) বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় নুসরাতের সৎ মা জোবাইদা বেগমকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জোবাইদা বেগম জানায়, ২০২১ সালে তার ফুফাতো ভাই সজীব কাজীর সাথে তার বিবাহ হয়। সজীব কাজীর আগের ঘরে এক ছেলে ইয়াসিন কাজী ও এক মেয়ে নুসরাত জাহান রোজা আছে জেনেও তিনি বিবাহ করেন। বিবাহের প্রথম থেকেই ছেলে ইয়াসিনের প্রতি যতটা মমত্ববোধ ছিল মেয়ে নুসরাতের প্রতি ততটা ছিল না। দুই ভাই-বোন প্রতিদিন ঝগড়া করতো। ইয়াসিন বয়সে বড় হলেও তিনি নুসরাতকে বেশি শাসন করতেন। ঘটনার দিন সকাল ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে ইয়াসিন ও নুসরাতের মাঝে ঝগড়া লাগে। ইয়াসিন নুসরাতকে হাত দিয়ে আঘাত করলে নুসরাত কান্না করতে থাকে। তখন সৎ মা জোবাইদা বেগম তার কান্না থামাতে নুসরাতের মুখ চেপে ধরে। নুসরাতের নাক-মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারে না। এক পর্যায়ে নুসরাতের নাক-মুখ চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারপর জোবাইদা বেগম শিশু নুসরাতকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কাঁথা দিয়ে ঢেকে নিজের দোষ আড়াল করতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। পরবর্তীতে নুসরাতের দাদা আবুল খায়ের কাজী বাড়িতে এসে নুসরাতকে গোসল করার জন্য ডাকতে থাকে। নুসরাত কোন সারা শব্দ না করায় তার দাদি ঘরে যেয়ে তাকে ডাকে এবং কোলে নিয়ে দেখে নুসরাত নিস্তেজ হয়ে আছে এবং মারা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয় আসামি জোবাইদকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে বুধবার তিনি বিজ্ঞ আদালতে ঘটনার সত্যতা (শ্বাসরোধে হত্যা করেছে) স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।