ম্যাজিস্ট্রেট দেখে ফল ব্যবসায়ীরা যেই তরমুজ ভোক্তার কাছে বিক্রি করেছেন ৫শ থেকে ৬শ টাকায়, সেই তরমুজের দাম নামিয়ে আনেন ১৫০ টাকায়।
শনিবার (১৬ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দামের চিত্রটি সম্পূর্ণ উল্টে যায়। ঘটনাটি ঘঠেছে উপজেলার গোপালদী বাজারে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে আড়াইহাজার ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
অভিযানে আড়াইহাজার থানার ওসি মো. আহসানউল্লাহ, গোপালদী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আতাউর রহমানসহ পুলিশ ও প্রশাসনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রমজান মাসে কয়েকদিন যাবৎ তরমুজ ও ফলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য অস্বাভাবিক দামে বিক্রি করাায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযান দেখে ব্যবসায়ীরা কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে বিক্রি করা শুরু করেন। দোকানে ৫শ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি করা তরমুজ অভিযানের সময় দুপুরে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
অপরদিকে লেবুর হালিপ্রতি ২০ টাকা কমে বিক্রি করতে দেখা যায়। বড় লেবু ১২০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা আর ছোট লেবুর প্রতি হালি ৬০ টাকা বিক্রি করেছেন তারা। এমনকি ৯০ টাকার সবজি ৭০ টাকায় বিক্রি করতেও দেখা গেছে। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট দেখে অনেক বিক্রেতারা দোকান রেখে পালিয়ে যান।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদি বাজারে তরমুজ বিক্রেতাসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানে পণ্যের ক্রয় রশিদ এবং মূল্য তালিকা দেখতে চাওয়া হয়। পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দেন ম্যাজিস্ট্রেট।
অভিযানের সময় স্থানীয় রয়েল বেকারির মেয়াদ উত্তীর্ণ বিভিন্ন পণ্য পেয়ে এবং দাম বেশি নেওয়ায় আরও ২ তরমুজ বিক্রিতাকে আটক করা হয়। পরে ভুল স্বীকার করে মুচলেকা দিলে তাদের ৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অপর দিকে দুপুরে আড়াইহাজার বাজারে দাম বেশি নেওয়ায় এক তরমুজ বিক্রেতাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় ক্রয় রশিদ দেখাতে না পারায় ও বেশি দামে বিক্রি করায় মো. সাজারুল ইসলাম নামে তরমুজ ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মাহাদী নামে গরু মাংস ব্যবসায়ী ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এ সময় ৬২০ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। বেশি দাম রাখায় গরু ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বাজারে ক্রয় করতে আসা তানভীর আহম্মেদ বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট দেখে ৫শ থেকে ৬শ টাকা দাম বেশি রাখা তরমুজ ১৫০ টাকায় কিনতে পেরেছি। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা প্রয়োজন। তাহলে আমরা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারতাম।
অপরদিকে আল আমিন নামে এক ক্রেতা বলেন, ১৫০ টাকা দামে তরমুজ বিক্রির খবর শুনে বাজারে এসে দেখি ম্যাজিস্ট্রেট যাওয়ার পর আবার বেশি দামে তরমুজ বিক্রি করছে বিক্রেতারা।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ জানান, শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমরা বাজার মনিটরিং করেছি। এ সময় অতিরিক্ত দামে মাংস বিক্রি করায় শরিফকে ১০ হাজার এবং মাহাদীকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। পরে বেশি দামে তরমুজ বিক্রি করায় সাজারুল নামের এক তরমুজ ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক জানান, রমজান মাসে কেউ অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে কারাদণ্ড ও জরিমানাসহ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের সকল উপজেলা প্রশাসনকে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছেন।