তিনদিন ধরে অপহৃতের পর চারদিনের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল থেকে দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপহৃতরা হলেন মোহাম্মদ আব্দুল জলিল ও হেফাজ উদ্দিন। তাঁরা উভয়ে পেশায় ব্যবসায়ী। এছাড়া এ ঘটনায় জড়িত চার জনকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে শাহবাগ থানা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম তাদের হলের ৫৪৪ নম্বর কক্ষ থেকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় অপহরণের সঙ্গে জড়িত তিন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার প্রাক্তন উপ-দপ্তর সম্পাদক ও ফিন্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবুল হাসান সাইদি, ছাত্রলীগের মুহসীন হল শাখার প্রচার উপ-সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোনতাছির হোসাইন এবং একই হলের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপ-সম্পাদক আল শাহরিয়ার মাহমুদ তানসেন। এর মধ্যে মোনতাছির নিজেকে শাহাবুদ্দিনের আত্মীয় বলে দাবি করেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাতিরঝিল থানা পুলিশ।
জানা যায়, ব্যবসার জন্য শাহাবুদ্দিন থেকে ৩৫ লাখ টাকা ধার নেন জলিল। কিন্তু টাকা ফেরত চাইলে তিনি তালবাহানা করে দেরি করছিলেন। পরে শাহাবুদ্দিন ১০ থেকে ১২ জন নিয়ে জলিলকে তার হাতিরঝিল থানার হাজিপাড়ার বাসা থেকে অপহরণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা হেফাজকেও অপহরণ করা হয়। জলিলকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে ও পরে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৫৪৪ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়।
ভুক্তভোগী জলিল বলেন, শাহাবুদ্দিন আমার কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পান। কিন্তু মাঝখানে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আমাকে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে বাসা থেকে ১০ থেকে ১২ জন নিয়ে তুলে আনেন। আমাকে বিভিন্ন স্থানে মারধর করা হয়েছে। গত তিনদিন ধরে আমাকে হলে আটকে রাখা হয়েছে।
শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টরআল আমিন তা নিশ্চিত করে বলেন, তার শরীরে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে কক্ষটি খুঁজে আমরা তেমন কোনো অস্ত্র পাইনি।
সার্বিক বিষয়ে অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান প্রক্টর বলেন, আমরা প্রথমে পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারলাম মুহসীন হলে চার বা পাঁচতলায় আমাদের কয়েকজন ছাত্রের সহযোগিতায় একজনকে তুলে আনা হয়েছে। টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে তাকে মারধরও করা হয়েছে। পরে শাহবাগ থানা ও হল প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা তাদের উদ্ধার করি। পরে জড়িত ও ভুক্তভোগীদের একত্র করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এতে সব ঘটনা বেরিয়ে আসে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী এদের বিচার হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের অপরাধমূলক কাজে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে থাকবে। ভুক্তভোগীকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জড়িতদের হাতিরঝিল থানায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিধি রয়েছে, তা প্রয়োগ করে হল প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আওলাদ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় হওয়া মামলায় শাহাবুদ্দীন ও অভিযুক্ত তিন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।