নরসিংদীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। ওই সময় আওয়ামী লীগের ৬ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে সদর উপজেলার মাধবদী বড় মসজিদের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নরসিংদী-১ সদর আসনের এমপি নজরুল ইসলাম হিরু (বীর প্রতিক) এর নাতী ও সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া (৪৩), চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), তার বডিগার্ড কামাল হোসেন (৩৮), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই মৎসজীবী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন (৩৮), মহিসাসুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জলিল, চরদিগলদীর ইউনিয়নের সজিব ও অজ্ঞাত নামা আরও ১ জন।
জানা যায়, নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থেকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী লাঠি-শোটা নিয়ে মিছিল বের করেন। একই সময় মাধবদী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হাইস্কুল মাঠ থেকে একটি মিছিল বের বরে। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ওই সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
ওই সময় এলোপাতারি গুলিতে কমপক্ষে ৬ আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দৌড়ে মাধবদী বাস স্ট্যান্ডের পশ্চিম দিকের বড় মসজিদে আশ্রয় নেয়। ওই সময় আন্দোলনকারীরা মসজিদের সিঁড়িতে ফেলে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ছয় আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করে। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাঁচাতে আকুতি জানালোও কেউ প্রাণ ভয়ে এগিয়ে আসেনি।
অন্যদিকে দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে আন্দোলনকারীরা জমায়েত হয়। পরে তারা মহাসড়ক দখল করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ওই সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
নরসিংদী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, মাধবদী হাইস্কুল প্রাঙ্গণ থেকে আমরা একটি মিছিল বের করি। ওই সময় মাধবদী পৌর বিএনপি সভাপতি আমানউল্লাহ’র নেতৃত্বে বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীরা অতর্কিত আমাদের মিছিলে হামলা চালায়। ওই সময় তারা আমাদের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে আমারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি। পরে আমাদের লোকজন মাধবদী বাজার বড় মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেয়। তখন বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীরা মসজিদের ভেতরে ঢুকে আমার আপন ছোট দেলোয়ার, সদর আসনের এমপির নাতী মনির, ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনসহ ৬ জনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের তো মারামারির প্রস্তুতি ছিল না। তাই তারা আমাদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। নামাজ চলাকালে তারা মসজিদের ভেতরে ঢুকে এত বড় নৃশংস ঘটনা ঘটাতে একবারও বুক কাঁপেনি। তাদের বিচার চাই
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ৬ আওয়ামী লীগ নেতা নিহতের খবর পেয়েছি। তাদের স্বজনরা লাশ বাড়িতে নিয়ে গেছে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা বাড়িতে নিয়ে যায়। বর্তমানে অবস্থা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।