Monday, December 23, 2024

নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে কৌশলী বিএনপি

আরও পড়ুন

দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও উজ্জীবিত রাখতে নানামুখী কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। এই মুহূর্তে কারাগারে বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্ত করে আন্দোলনে সক্রিয় করাই প্রধান লক্ষ্য দলটির। কারামুক্ত সবাইকে রোজার মাসে ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, দায়িত্বশীল নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর সারা দেশে বিভিন্ন স্তরে যেসব নেতাকর্মী সাংগঠনিক দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ‘ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা’ জানানো হবে। গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপি নেতারা জানান, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে একদফা আন্দোলন জোরদার করার পর সারা দেশে নেতাকর্মীরা মামলা ও গ্রেপ্তারের শিকার হন। গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘোষণা করার পর গ্রেপ্তার-নির্যাতন আরও তীব্র হয়। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। দলের অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই পরিস্থিতির মধ্যেই ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত বিএনপি হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করে।

বিএনপির তথ্য মতে, ২৮ অক্টোবরের কয়েকদিন আগে থেকে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ১৮৪টির বেশি মামলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৬৮৪ জনের মতো নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এ সময় ২৭ হাজার ৫১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেওয়া হয়, একজন সাংবাদিকসহ মৃত্যুবরণ করেন ২৮ জন। ৯ হাজার ৭০৪ জন আহত হন।

আরও পড়ুনঃ  খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার আবেদন করেছে পরিবার

বিএনপি নেতারা বলছেন, গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর সারা দেশে যেসব নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন একে একে কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জ্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ মধ্যম সারির অনেক নেতা মুক্ত হয়েছেন। অনেকে মুক্তির অপেক্ষায় আছেন। এর পরও ঢাকাসহ সারা দেশে ৪ হাজারের বেশি নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি আছেন। তাদের মুক্ত করতে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। দলের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্তদের পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর দপ্তর সম্পাদকের মাধ্যমে কারাবন্দি, ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর। শিগগির তাদের নানাভাবে মূল্যায়ন করা হবে।

দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, আন্দোলনে সক্রিয়, নির্যাতিত ও কারাগারে যাওয়া নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মধ্যে কারামুক্তদের কেন্দ্রীয়ভাবে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে যেসব নেতাকর্মী বিগত দিনের আন্দোলনে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন, তারাও লজ্জিত হয়ে পরবর্তী সময়ে সক্রিয় হবেন। সেইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে লাগাতার আন্দোলনে ঝিমিয়ে পড়া মাঠের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সংগঠিত করা সম্ভব হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু করে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত, এমনকি এখনো কোথাও কোথাও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে শীর্ষ নেতারাসহ অনেকেই সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছেন। অনেকে মুক্ত হচ্ছেন। শত নির্যাতন-নিপীড়নেও আমাদের নেতাকর্মীরা হতাশ নন, তারা উজ্জীবিত। তারা একটি সত্য ও ন্যায়ের জন্য লড়াই করছেন।’

আরও পড়ুনঃ  আজকে না হয় কাল, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হবেই: আব্বাস

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় আগামী দিনে মাঠের কর্মসূচির ধরন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন নেতারা। তবে এখনো কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের বিশ্বাস, রোজার আগে বাকি নেতাকর্মীরাও কারামুক্ত হবেন। এরপর আন্দোলন নিয়ে নানা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা শেষে ভেবে-চিন্তে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির ওই সভায় কারামুক্ত নেতারা তাদের শারীরিক অসুস্থতাসহ কারাগারের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সবাই কারামুক্ত নেতাদের প্রতি সহানুভূতি জানান। একপর্যায়ে সারা দেশে মুক্তি পাওয়া নেতাকর্মীদের সংবর্ধনার মাধ্যমে সম্মান জানানোর প্রস্তাব আসে। পাশাপাশি চলমান আন্দোলনে দায়িত্বশীল নেতাদের গ্রেপ্তারের পর যারা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ‘কৃতজ্ঞতা’ জানিয়ে ধন্যবাদপত্র দেওয়ার প্রস্তাব আসে।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, এই মুহূর্তে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মাঠের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে কারামুক্ত নেতাকর্মীদের সংবর্ধনা কর্মসূচি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে। এই সংবর্ধনা নেতাকর্মীদের মনোবল আরও দৃঢ় করবে। তা ছাড়া এর মাধ্যমে কোন বিভাগ বা জেলায় কতজন জেল খেটেছেন, তার একটি তালিকা করা হবে। এই তালিকা ধরে জেলখাটা নেতাকর্মীদের দলীয় পদ না থাকলে তাদের পরবর্তী সময়ে মূল্যায়নও করা যাবে। ১০টি বিভাগে কারামুক্ত নেতাকর্মীদের বিভাগভিত্তিক সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সেখানে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা অংশ নেবেন। এ ছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতারের আয়োজন করবে। পাশাপাশি সারা দেশের সব সাংগঠনিক ইউনিটেও ইফতার মাহফিল আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

আরও পড়ুনঃ  জামায়াত ভোট ছেড়ে দল গোছাতে তৎপর

নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের এই চিন্তাকে সময়োপযোগী আখ্যা দিয়ে বিএনপির মধ্যম সারির একাধিক নেতা বলেন, তৃণমূলের যেসব নেতাকর্মী আন্দোলনে সক্রিয় থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাদের অনেকেরই দলীয় পদ-পদবি নেই। তাদের সম্মানের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সাংগঠনিকভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। ফলে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি সফলে আরও প্রেরণা পাবেন।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন কালবেলাকে বলেন, ‘কারামুক্ত নেতাকর্মীদের সংবর্ধনা ও নেতাকর্মীদের ধন্যবাদপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ভালো উদ্যোগ। কেননা রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়েই অধিকাংশ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেছেন।’

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গতকাল বুধবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। পরে তিনি জানান, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। জামিন পেয়েও কারামুক্ত হতে নানা ভোগান্তি হয়েছে। সরকারের নানা বাহানা ও দমন-পীড়নের মধ্যেই কারামুক্ত হয়েছি।’

রাজধানীর পল্টন থানার এক মামলায় ৩১ অক্টোবর ঢাকার কাঁঠালবাগানের একটি বাসা থেকে আলালকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহাম্মদ। তাকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় লিফলেট বিতরণকালে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ