দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন কলেজ নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ জেলা শহরে অবস্থিত । এছাড়াও শহরে রয়েছে আব্দুল হাই সিটি কলেজ, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন গ্রামসহ আশেপাশের জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছেন পড়াশোনা করতে। দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের অনেককেই থাকতে হয় মেসে। এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের।
শিক্ষার্থীদের চলতে হয় বাড়ি থেকে পাঠানো নির্দিষ্ট কিছু টাকায়। কেউ কেউ চলেন টিউশনির টাকায়। যা দিয়ে এমনিতেই পড়াশোনা, মেস ভাড়া, খাবার বিলসহ অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তারপর রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আরও বেশি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। সারাদিন রোজা থেকেও মেসে ইফতারির আয়োজন করতে পারছেন না। সেহরিতে একটু ভালো খেলে রাতে খাবারের মান কমিয়ে আনতে হচ্ছে। দিন দিন টাকা বেশি দিলেও খাবারের মান একই থাকছে। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আলামিন হোসেন খুলনার কয়রা থেকে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে নড়াইলে এসেছেন। থাকছেন কলেজের পাশের সাত্তার মেসে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, জিনিসপত্রের অনেক বেশি দাম। আগে যে দাম ছিল রমজান মাসে তা অনেক বেশি বেড়েছে। যা কেনা আমাদের জন্য সম্ভব হচ্ছে না। সারাদিন রোজা থেকেও মেসে ইফতারের আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশে যে মসজিদ আছে সেখানেই ইফতার করতে হচ্ছে। রোজা থাকার জন্য সেহরিতে যে একটু ভালো খাব, ওই সময় ভালো খেতে গেলে আবার রাতের খাবারে ভালো খাওয়া হচ্ছে না। যা আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলছে।
মো. মান্না শিকদার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রমজান মাসে সব কিছুর দাম বেড়েছে। ইফতার তো মেসে করতেই পারছি না। আর সেহরিতে যদি আমরা ভালো কোনো কিছু খাই তাহলে ইফতারের পর এখানে যে মিল (রাতের খাবার) চলে ওইখানে আবার নরমাল করে দিতে হয়। আর যদি দুই বেলা ভালো খেত হয় অনেক বেশি টাকার পরিমাণ এসে যায়। আমাদের টাকার যে বাজেট ওর ভেতর হয় না।
ফয়সাল আহমেদ বলেন, সবাই একটু ভালো খাওয়ারই চেষ্টা করেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভালো খাওয়াটা সম্ভব হচ্ছে না। মেসে খাওয়া-দাওযার অবস্থা অনেক খারাপ হচ্ছে। খাবারের জন্য যে বাজেট আছে তা দিয়ে সেহরি ও রাতের ব্যবস্থা করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই ইফতারের কোনো ব্যবস্থাই নেই মেসে। দ্রব্যমূল্যের দাম কম থাকলে একটা ভালো ইফতারের আয়োজন করা যেত। সেহরি ও রাতের খাবারের মানটাও ভালো করা যেত।
যশোর থেকে পড়তে আসা ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বাঁধন বলেন, গত বছর বাজারে যে খরচটা হত সেই তুলনায় এখন সবারই টাকার অংক বাড়াতে হয়েছে। টাকার পরিমাণ বাড়লেও খাবারে মান একই আছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাদের ওপর প্রভাব পড়েছে। আমাদের সেহরি-ইফতারে খাওয়ার মান কমে এসেছে।
শিক্ষার্থীদের এমন দুরাবস্থা নিয়ে কথা হয় সমাজকর্মী ও কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নড়াইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, রমজানে যেসব পণ্য আমরা ব্যবহার করি তার কোনোটারই দেশে অভাব নেই। তারপরও ব্যবসায়ীরা দামের হেরফের করছেন। প্রত্যেকবারই রমজান আসলে ব্যবসায়ীরা এমন করে। বাজার নিযন্ত্রণে সরকার চেষ্টা করছে, আমরাও মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে ছাত্রদের যে অবস্থার কথা শুনলাম সেখানে প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা পরিদর্শন করে সম্ভব হলে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।